অ্যালার্জি: লক্ষণ, প্রতিকার, মেডিসিন ও ঘরোয়া উপায়
বর্তমান সময়ে অ্যালার্জি একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা হলেও অনেকেই এটিকে অবহেলা করেন। হঠাৎ চুলকানি, হাঁচি, চোখে পানি পড়া, ত্বকে র্যাশ বা শ্বাসকষ্ট—এসবই অ্যালার্জির সাধারণ লক্ষণ। গবেষণা বলছে, বিশ্বে প্রতি ১০ জনের মধ্যে অন্তত ৩ জন কোনো না কোনো অ্যালার্জিতে ভুগছেন। সঠিক প্রতিকার, প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং ঘরোয়া উপায় জানা থাকলে অ্যালার্জি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
অ্যালার্জি কী?
অ্যালার্জি হলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া। যখন শরীর কোনো নির্দিষ্ট উপাদানকে (যেমন—ধুলোবালি, পরাগ, কিছু খাবার বা ওষুধ) ক্ষতিকর হিসেবে ধরে নেয়, তখন শরীর প্রতিরোধ করার জন্য হরমোন ও রাসায়নিক নিঃসরণ করে। এর ফলে শরীরে চুলকানি, লালচে দাগ, হাঁচি, শ্বাসকষ্টসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়।
অ্যালার্জির প্রধান কারণ
-
ধুলোবালি ও ধোঁয়া
-
পশুর লোম
-
ফুলের পরাগ
-
কিছু খাবার (ডিম, বাদাম, চিংড়ি, দুধ ইত্যাদি)
-
কিছু ওষুধ
-
আবহাওয়া পরিবর্তন
-
কেমিক্যাল বা প্রসাধনী
অ্যালার্জির লক্ষণ
অ্যালার্জির লক্ষণ সবার ক্ষেত্রে এক রকম হয় না। তবে সাধারণত নিচের সমস্যাগুলো দেখা যায়—
-
ত্বকের অ্যালার্জি
-
লালচে ফুসকুড়ি
-
চুলকানি
-
ফোলাভাব
-
ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া
-
-
শ্বাসতন্ত্রের অ্যালার্জি
-
বারবার হাঁচি
-
নাক বন্ধ হওয়া
-
শ্বাসকষ্ট
-
কাশি
-
-
খাদ্য অ্যালার্জি
-
বমি ভাব
-
ডায়রিয়া
-
পেট ব্যথা
-
ঠোঁট বা গলায় ফোলাভাব
-
-
চোখের অ্যালার্জি
-
চোখ লাল হওয়া
-
পানি পড়া
-
চোখে জ্বালাপোড়া
-
👉 একজন অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞ বলেছেন, “অ্যালার্জি কোনো সাধারণ সমস্যা মনে হলেও অবহেলা করলে এটি দীর্ঘস্থায়ী হাঁপানি বা মারাত্মক প্রতিক্রিয়ায় রূপ নিতে পারে।”
অ্যালার্জির প্রতিকার
অ্যালার্জি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলা প্রয়োজন:
-
ধুলোবালি বা পরাগে অ্যালার্জি থাকলে বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করুন।
-
নিয়মিত বাসা পরিষ্কার রাখুন।
-
পশুপাখির লোম এড়িয়ে চলুন।
-
যেসব খাবারে অ্যালার্জি হয় সেগুলো খাবেন না।
-
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে স্বাস্থ্যকর খাবার খান।
-
পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
অ্যালার্জির মেডিসিন
অ্যালার্জি চিকিৎসায় সাধারণত নিচের ওষুধগুলো ব্যবহার করা হয় (চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সেবন করা উচিত নয়):
-
অ্যান্টিহিস্টামিন ট্যাবলেট
-
যেমন: সিটিরিজিন, লোরাটাডিন, ফেক্সোফেনাডিন
-
কাজ: চুলকানি, হাঁচি ও নাক দিয়ে পানি পড়া কমায়।
-
-
নাকের স্প্রে (Nasal Spray)
-
যেমন: স্টেরয়েড স্প্রে (Fluticasone, Mometasone)
-
কাজ: নাক বন্ধ হওয়া ও শ্বাসকষ্ট কমায়।
-
-
চোখের ড্রপ
-
অ্যালার্জির কারণে চোখে চুলকানি বা লালচেভাব কমায়।
-
-
ইনহেলার
-
শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগীদের জন্য।
-
👉 ডাক্তাররা বলেন, “অ্যালার্জির ওষুধ শুধুমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে, নইলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।”
অ্যালার্জির ঘরোয়া উপায়
ওষুধের পাশাপাশি ঘরোয়া উপায়ে অ্যালার্জি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
-
মধু
-
প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অ্যালার্জি উপাদান।
-
প্রতিদিন সকালে এক চামচ মধু খেলে অ্যালার্জি কমতে সাহায্য করে।
-
-
আদা চা
-
প্রদাহনাশক উপাদান রয়েছে।
-
নাক বন্ধ বা কাশি কমাতে কার্যকর।
-
-
তুলসী পাতা
-
শ্বাসতন্ত্রের অ্যালার্জিতে উপকারী।
-
তুলসী পাতা চিবানো বা চায়ে ফুটিয়ে খাওয়া যায়।
-
-
লেবু পানি
-
ভিটামিন-সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
-
-
হলুদ দুধ
-
রাতে এক গ্লাস গরম দুধে হলুদ মিশিয়ে খেলে অ্যালার্জি কমে।
-
অ্যালার্জি প্রতিরোধে করণীয়
-
নিজের অ্যালার্জির কারণ চিহ্নিত করুন।
-
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন বজায় রাখুন।
-
হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বা মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান।
-
কখনোই নিজের ইচ্ছেমতো দীর্ঘদিন ওষুধ খাবেন না।
উপসংহার
অ্যালার্জি সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য নয়, তবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সচেতনতা, সঠিক প্রতিকার, চিকিৎসকের পরামর্শমতো মেডিসিন ব্যবহার এবং কিছু ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করলে অ্যালার্জি থেকে মুক্তি পাওয়া অনেক সহজ। মনে রাখবেন, “অ্যালার্জি অবহেলা নয়, সঠিক যত্নই হলো প্রতিকার।”